সিলেটে ফের জঙ্গি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নব্য জেএমবি’র সামরিক শাখার ৫ সদস্য গ্রেপ্তারের পর এই আতঙ্ক আরো বেড়েছে। চোখ-কান খোলা রাখতে শুরু করেছেন সবাই। নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ওলিকুল শিরোমণি হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো কিংবা আত্মগোপনে থাকার জন্য সিলেটকেই বেছে নেয় জঙ্গিরা। সিলেটের মানুষ ধার্মিক হওয়ার কারণেই তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে জঙ্গিরা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে। এ কারণে সিলেটে অবস্থান করেই জঙ্গিরা শক্তি বাড়িয়ে থাকে।
সোমবার সিলেট থেকে আটক করা হয়েছে ৫ জঙ্গিকে। তারা সবাই নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য। আইএসের নজর কাড়তে তারা সিলেটের মাজারে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পুলিশের নজরদারির কারণে মিশন ব্যর্থ হয়। মিশন ব্যর্থ হলেও নব্য জেএমবির সিলেট অঞ্চলের প্রধান নাইমুজ্জামানের নেতৃত্বে তারা সিলেটে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছিল। এ কারণে নগরীর টিলাগড়ের শাহভিলায় তারা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার খুলতে একটি বাসাও ভাড়া নেয়। আটকের পর সিলেটের জঙ্গিরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে- জঙ্গি ট্রেনিং দিতেই তারা ওই বাসা ভাড়া নিয়েছিল। কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের আড়ালে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চেয়েছিল। এদিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট থেকে আল্লাহর দলের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার ওই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক মাস আগে সিলেটের আরামবাগ এলাকার একটি বাসা থেকে ওই সংগঠনের আরো ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সদস্যরা সিলেটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। সিলেটের সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোর্তিময় সরকার জানিয়েছেন, সিলেটে জঙ্গি তৎপরতা রুখতে মহানগর পুলিশ কাজ করছে। মাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। পাশাপাশি সিলেটে অন্য কোনোভাবে জঙ্গি তৎপরতা চলছে কী না- সেদিকেও নজরদারি রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিলেটের পুলিশ সক্রিয় থাকার কারণেই এখানে জঙ্গিদের গত ২৩শে জুলাই মিশন ব্যর্থ হয়। জঙ্গি তৎপরতা সিলেটে এবারই প্রথম নয়। অনেক আগে থেকেই সিলেটে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হয়। এক সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জেহাদের নেতারা সিলেটে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়েছিল। তাদের প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডের কারণে সিলেটের জঙ্গি বিষয়টি প্রকাশ পায়। এরপর সিলেটের মাজারে বৃটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা, মাজারে ওরসে বোমা হামলার ঘটনায় সিলেটে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। ওই সময় সিলেটে জেএমবির জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছিল। বিএনপির সরকারের সময়ই জঙ্গিদের আটক অভিযান শুরু হয়। জেএমবির সিলেট অঞ্চলের প্রধান শরিফ শাহেদুল ইসলামসহ কয়েকজন জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর সিলেটে তাদের সাংগঠনিক অবস্থান দুর্বল হয়। তবে দেশ কাঁপানো জঙ্গি নেতা শায়েখ আবদুর রহমানের সিলেটের সূর্যদীঘল বাড়িতে অবস্থান এবং আটকের ঘটনায় ২০০৬ সালে আবারো আলোচনায় আসে জঙ্গি ইস্যু। ওই সময় সিলেটে জেএমবির পরবর্তী সময়ের প্রধান সাইদুর রহমানও অবস্থান নিয়েছিল। এর আগে আওয়ামী লীগের সভা শেষে গুলশান সেন্টারে, তাঁতীপাড়ায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভায়, টিলাগড়েও হয় বোমা হামলা। ২০১৭ সালে সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গি অভিযানকে ঘিরে ফের আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। জঙ্গিদের ছোড়া বোমা ও গ্রেনেডে প্রাণ হারিয়েছেন র্যাব, পুলিশ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ অন্তত ৮ জন। সর্বশেষ গত সোমবার ও মঙ্গলবার নগরীর মিরাবাজার, টুকেরবাজার ও দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন স্থানে ঢাকা থেকে আসা সিটিটিসির বিশেষ দল ‘নব্য জেএমবি’র পাঁচ সদস্য আটক ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে। নগরীর শাপলাবাগের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের নামে তারা ‘সামরিক’ প্রশিক্ষণ দেয়ারও পরিকল্পনা নিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মাজারে হামলা করা। নব্য জেএমবির শূরা সদস্য ছিল গ্রেপ্তার হওয়া নাইমুজ্জামান। পুলিশ জানিয়েছে, সিলেটে জঙ্গিরা বারবার এসে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু অবস্থান শক্ত করার আগেই তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এবারো গ্রেপ্তার হলো নব্য জেএমবির ৫ সদস্য।
Leave a Reply